পশ্চিমবঙ্গের কলকাতায় করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর পর দুদিন ধরে বাড়িতেই পড়ে ছিল এক ব্যক্তির মৃতদেহ। গত সোমবার দুপুরে কলকাতা শহরে ওই ব্যক্তির মৃত্যু হয়। তারপর থেকে মৃতের পরিবার থানা, স্বাস্থ্য ভবন, কলকাতা পুরসভায় যোগাযোগের চেষ্টা করেও কোনো সাড়া পাননি। মরদেহে পচন শুরু হয়ে গেলে গতকাল মঙ্গলবার অনেক কষ্টে একটি ফ্রিজ জোগাড় করে তার ভেতরে কোনোরকমে ঢুকিয়ে রাখা হয় মৃতদেহটি।
মৃত্যুর প্রায় ৪৪ ঘণ্টা পর আজ বুধবার কলকাতা পুরসভা মৃতদেহ নেওয়ার উদ্যোগ গ্রহণ করে।
ভারতের সংবাদমাধ্যম জি নিউজের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত সোমবার সকালে চিকিৎসকের পরামর্শে তার করোনার নমুনা পরীক্ষা করতে দেওয়া হয়েছিল। বাড়ি ফিরে খাওয়া-দাওয়ার পর কলকাতার আর্মহাস্ট স্ট্রিটের নিজ বাড়িতেই হঠাৎ মৃত্যু হয় ওই প্রবীণের।
এ সময় পরিবারের লোকজন চিকিৎসক ডেকে আনলে করোনা পরীক্ষার রিপোর্টের জন্য অপেক্ষা করতে বলেন চিকিৎসক।
মৃতের আত্মীয় বলেন, ‘মৃত্যুর পর আমরা থানায় যাই। তারা বলেন স্বাস্থ্য ভবনে যোগাযোগ করুন। স্বাস্থ্য ভবনের হেল্পলাইনের ফোন করে আমরা লাইন পাইনি। হেল্পলাইন নম্বর বেজেই গেল। রাত নয়টা পর্যন্ত কিছু করতে না পেরে দেহটি সংরক্ষণ করার চেষ্টা করি। চিকিৎসক সেইমতো লিখেও দেন। কিন্তু কোনো সংরক্ষণ কেন্দ্র এই দেহ নিতে চায়নি।’
পুলিশকে জানিয়েও কোনো ব্যবস্থা হয়নি বলে অভিযোগ করেন পরিবারের সদস্যরা।
পরদিন মঙ্গলবার সকালে পরিবারের সদস্যরা কলকাতা পুরসভার অফিসে যান। নিয়ম জানিয়ে তারা জানিয়ে দেয় স্বাস্থ্য ভবনে যেতে। কিন্তু স্বাস্থ্যভবন থেকেও রিপোর্ট আনার জন্য বলে দেয়।
রাত এগারোটায় রিপোর্ট হাতে পান পরিবারের সদস্যরা। সেখানে করোনা রিপোর্ট পজিটিভ আসে। মঙ্গলবার থেকে একটি ফ্রিজে দেহটি সংরক্ষণ করে রাখা হয়।
মৃতের পরিবার অভিযোগ করে, রিপোর্ট হাতে পাওয়ার পর স্বাস্থ্য ভবনে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলেও কেউ ফোন ধরেনি। অবশেষে আজ বুধবার সকালে স্বাস্থ্য ভবনে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়, সেখান থেকে কলকাতা পৌরসভায় খবর যায়।
মৃতের ছেলে বলেন, ‘বাবার মৃতদেহ দুদিন ধরে চোখের সামনে বাড়িতেই রয়েছে। যন্ত্রণাটা বোঝার চেষ্টা করুন। অসহায় লাগছে। কি করবো বুঝতে পারছিনা। সুরক্ষার বিষয় রয়েছে। মৃত্যুর পর এমন অভিজ্ঞতা হবে স্বপ্নেও কল্পনা করিনি। এক দুর্বিষহ অভিজ্ঞতার সাক্ষী থাকল গোটা পরিবার।’
Leave a Reply